খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ঢাকা

আওয়ামী লীগের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ব্যবসায় ধস!

অনিরুদ্ধ অনিকেত
প্রকাশিত : বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫, ৬:০২ পূর্বাহ্ণ
আওয়ামী লীগের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ব্যবসায় ধস!

মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনায় উদ্ভাসিত হোক বাংলাদেশ- এমন চাওয়া সর্বস্তরের মানুষের। কিন্তু সত্য চেতনা কোনটি? এটি নিয়ে আছে ব্যাপক বিবাদ। বিবাদের সূত্রপাত ধর্মকেন্দ্রিক। মুক্তিযুদ্ধে দুই শ্রেণির মানুষের সবচেয়ে বেশি অবদান। ১. মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বদানকারী। ২. সাধারণ জনতা, যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যেভাবেই ধরা হোক বা বলা হোক দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষের সংখ্যাই বেশি। প্রথম শ্রেণির নেতা-নেত্রী সংখ্যা দ্বিতীয় শ্রেণির তুলনায় অতি নগণ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়ক বিতর্কের মূল সমস্যা এখানেই। কারণ নৃতাত্বিকভাবে এদেশের মানুষ ধর্মভীরু। ১৯৭১ সালে নাস্তিক তো তেমন ছিলই না। বরং সাম্যবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের সংখ্যাও ছিল নেহায়েত নগণ্য। ২-৫ জন যা-ও ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন তারা মূলত এলিট শ্রেণির; যাদের সাথে সমাজের সাধারণ মানুষের তেমন সম্পর্ক ও সখ্যতা ছিল না। যে লাখ লাখ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিলেন, তাদের মধ্যে হাতে গোনা কিছু নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যতীত সবাই ছিলেন যার যার ধর্মে চূড়ান্ত বিশ্বাসী। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ এর সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নামক বিষবাষ্প যে আমদানি করা হলো, তা কোনোক্রমেই কোটি কোটি সাধারণ বীর মুক্তিযুদ্ধার অন্তস্থ চাওয়া ছিল না। অথচ তাদের প্রত্যাশা বা চাওয়ার কোনো মূল্যায়ন করা হলো না। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের মূল স্টেকদের ছেঁটে ফেলা হলো। সংবিধানকে বলপূর্বক নাস্তিক্য ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের কল্যাণে নিয়োজিত করলেন, শেখ মুজিবুর রহমান। সদ্য স্বাধীন দেশ প্রকৃত মুক্তির পথ হারালো। মুক্তস্বাধীন সত্তা ত্যাগ করে ভারতীয় গোলামির জিঞ্জির পরলো।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই কোটি কোটি মুক্তিযোদ্ধার বিশ্বাসবিরোধী ও আদর্শ পরিপন্থী এই চেতনাকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শের মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করে আসছে। যার ফলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণের প্রত্যাশা পূরণ তো করতেই পারেনি, তদুপরি জনবিরোধী হিসেবে আজ স্পষ্ট চিহ্নিত। আমজনতার মন ও মনন এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজস্ব কল্পনাপ্রসূত বিধিবিধানকে চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্ট শাসকে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ।

যদিও অনেকেই বলতে চান- আওয়ামী লীগ ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত এ দেশের মানুষের চেতনার সাথে সমান্তরালে থেকে দেশ শাসন করেছে। কথাটি কিছুমাত্র সত্য নয়। বরং দিল্লিদাসি ভারতপ্রেমী হওয়ার ক্ষেত্রে অতুলনীয় ছিল বরাবরই। ১৯৯৬-২০০১ ব্যতীত সকল আমলে আওয়ামী লীগ মূলত এবং সর্বত ফ্যাসিস্ট। আর এই ফ্যাসিবাদী শাসন মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেই করেছে। আরও স্পষ্ট বলা যায়, চেতনার ব্যবসার মাধ্যমেই করেছে। তবে গত ১৫ বছরের অপরাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থলোপাটের অর্থনীতির কারণে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায় ভাটা পড়ে এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনাকে গদিচ্যুত করে। গণঘৃণা ও গণদ্রোহের শিকার হাসিনা পূর্বপুরুষ লক্ষ্মণ সেনের মতো পালাতে বাধ্য হন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবহার

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আওয়ামী লীগ নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেদের দাবি করে এসেছে। কিছু দেশি বিদেশি গণমাধ্যম এই বয়ানের সপক্ষে চেতনার সুদাসল বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের মানুষের দেশ ও ধর্ম সম্পর্কে মূল বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত করার প্রবল প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ নামীয় ফ্যাসিস্ট দানব দলটি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের ভিত্তির ওপর রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে এসেছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে সংহত করতে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনার ব্যবহার করে এসেছে, যুগ যুগ ধরে। তাই চেতনা ব্যবসা মূলত গণমানুষের কাছে নেতিবাচক হিসেবে পরিগণিত।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও মুক্তিযুদ্ধের কর্তৃত্ববাদী বয়াননির্ভর কথিত ‘চেতনা’কে সামনে রেখে ভোটে জয়লাভ করে বলে দাবি করে। প্রকৃত বাস্তবতা ভিন্ন। সেই নির্বাচনকে সত্যিকার মডেল বলা যাবে কি না-তা নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ আছে। চেতনা নামীয় এই বিশেষ ব্যবসার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সেনা অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের হত্যার বিচার এবং তথাকথিত রাজাকারদের বিচারের নামে ফ্যাসিস্ট লীগ বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে সকলেই বিশ্বাস করে। সময়ের সাথে সাথে এই চেতনা ব্যবসা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ উঠতে থাকে এবং দেশের মানুষ কথিত চেতনার বিরোধিতায় নামে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও রাজনৈতিক পুঁজি

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আদর্শগত জায়গায় রাখেনি, বরং এটিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে অতিনিকৃষ্টভাবে ব্যবহার করেছে। বিভিন্ন সময়ে বিরোধী দলগুলোকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আখ্যা দিয়ে দমন করা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কঠিন করে তোলা হয়েছে। কার্যত বিরোধী রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের অরিন্দম বীর ও স্বাধীনতার মহান ঘোষক বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্র নায়ক জিয়াউর রহমানকেও রাজাকার বলতে সামান্যতম দ্বিধাও করেনি দিল্লির দালাল পলাতক খুনি হাসিনা। দিল্লির স্বার্থকে বাংলাদেশের স্বার্থ বানাতে গিয়ে হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নানাবিধ কল্পিত ও পরিকল্পিত দোষারোপ করেছে এবং এই সমস্ত অপকর্ম ও অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের কথিত চেতনার সবিশেষ আশ্রয় নিয়েছে। এসব কাজ হাসিনা একবারে ট্রেনড টাউটের মতোই করেছে। অথচ ২০১৪-এর বিনা ভোট ও ২০১৮ সালের নিশি ভোটের নির্বাচনে দেশে বিদেশে কুখ্যাতি অর্জন ও বিতর্কিত হলেও, বিরোধী দলকে দমন করা এবং একদলীয় শাসন কায়েম করতে বার বার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহারের কারণে মুক্তিযুদ্ধই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসার ধসের কারণ

১. রাজনৈতিক অবিশ্বাস ও একদলীয় শাসনের অভিযোগ: আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই বিরোধী দলগুলোকে কোণঠাসা করার নীতি গ্রহণ করেছে। একদলীয় শাসনের অভিযোগ, বিরোধী মত দমনের সংস্কৃতি এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের অভাবের কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে একটি অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

২. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি: আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি এবং সরকারি অর্থের অপচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে তীব্রক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। জনগণ মনে করে, দলটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও বাস্তবে এটি কেবল ক্ষমতায় থাকার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

৩. তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে অতীতের চেয়ে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সম্মান করলেও বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে এটি কেবল ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার একটি উপায় হিসেবে দেখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিকল্প গণমাধ্যমের বিস্তারের কারণে তরুণরা এখন তথ্য যাচাই করতে পারছে, যা আওয়ামী লীগের নিজস্বার্থে প্রচলিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চেতনার প্রচারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

৪. বৈদেশিক কূটনৈতিক চাপ: ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, খুন, অর্থপাচার, মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারিক ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিক নির্যাতন এবং সর্বোপরি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চরম সংকোচনের ফলে বিদেশি কূটনৈতিক মহল আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন বন্ধ করে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বিতর্কিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৫. অর্থনৈতিক সংকট ও জনমনে অসন্তোষ: করোনাভাইরাস মহামারির পর অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বৈদেশিক ঋণের চাপ এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দেয় বলে জনগণের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কোনো সমস্যা হলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সরকারের এসব ব্যর্থতা ঢেকে রাখার বারংবার চেষ্টা করায় ‘চেতনা’ ব্যবসা গুরুত্ব হারায়।

৬. ২৪-এর অভ্যুত্থান: সর্বশেষ ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সাধারণ ছাত্র জনতার ওপর পৈশাচিক নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লংঘন চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছায়। নিরস্ত্র ছাত্র জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করায় দেশের মানুষ প্রবল রোষে ফুঁসে ওঠে। পলাতক হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে দুই হাজারের অধিক হত্যা এবং ৪০ হাজারেরও অধিক মারাত্মক আহত করে। নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র-জনতা হত্যা করে লাশ গুম ও পুড়িয়ে ফেলার মতো নিকৃষ্টতম কাজে নিয়োজিত হয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরেরা। নতুন প্রজন্ম মনে করে এটি চেতনা ব্যবসার কুফল। যে কারণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতা স্লোগান দেয়- ‘তুমি কে? আমি কে?; রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে? কে বলেছে/ স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’। এই স্লোগান স্পষ্টত চেতনা ব্যবসার প্রতি সর্বস্তরের প্রতিবাদ।

চেতনা ব্যবসার ভবিষ্যৎ

বিএনপি ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ প্রাধান্য পায়, যা মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত চেতনার সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশপ্রেমিক শক্তিকে পুনর্বাসন এবং সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের মূলভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে আসছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ চিন্তার গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান। সকলকে নিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়াই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। বহির্বিশ্বে শুধু একটি দেশের সাথেই সম্পর্ক রক্ষা চেতনা নয় বরং সকলের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখাই প্রকৃত দেশপ্রেম। কিন্তু তা না করে আওয়ামী লীগ নামীয় স্বেচ্ছায় পলাতক দলটি দিল্লির দালালিকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে ব্যবহার করেছে। এই কায়দায় যদি বিএনপিও চেতনার ফেরিওয়ালা হওয়ার চেষ্টা করে তাহলে জনচ্যুত হবে। তাহলে গণপ্রত্যাখ্যান আসন্ন। যেসমস্ত দেশের স্বাধীনতার বয়স ১০০-২০০ বছর হয়েছে সেসব দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা যেমনভাবে চর্চিত আমাদের দেশেও ততটুকুন প্রয়োজন। চেতনার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবসা আর চলবে না। তাই বিএনপির উচিত নতুন রাজনৈতিক কৌশল ও ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি করা। বাংলাদেশের জন্য চিরশত্রু ভারতবিরোধী রাজনীতি সময়ের দাবি। ভারতমুখি রজানীতি করলে ভবিষ্যতে আবারও পলায়ন প্রয়োজন হতেও পারে। অতএব, চেতনার ফেরিওয়ালা নয়; বরং বিএনপি’র কাছে জনপ্রত্যাশ্যার আলোকে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যুগোপযোগী আধুনিক রাজনীতিই কাম্য।

লেখক: কলামিস্ট

ভালুকায় শিশু যৌন পাচার প্রতিরোধে সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৬:০৭ অপরাহ্ণ
ভালুকায় শিশু যৌন পাচার প্রতিরোধে সেমিনার

শিশু যৌন পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে ভালুকায় এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৯ মে) দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘রূপান্তর’-এর সহযোগিতায় এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জাহিদা ফেরদৌসী।

এছাড়াও সেমিনারে অংশ নেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল, ভালুকা থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুল হোসাইন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি এবং রূপান্তর-এর কর্মকর্তারা।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, শিশুরা যেন পাচারের শিকার না হয়, সেজন্য পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুদের নিরাপত্তায় সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।

ভালুকায় ব্র্যাকের বীজ বিতরণ কর্মসূচি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ১:১৩ অপরাহ্ণ
ভালুকায় ব্র্যাকের বীজ বিতরণ কর্মসূচি

“থাকবেনা কোনো পতিত জমি”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির শস্য নিরাপত্তা বীমা প্রকল্পের আওতায় ৩০ জন সদস্যের মাঝে সবজি বীজ বিতরণ করা হয়েছে।সোমবার বিকালে গাজীপুর রিজিওনের ভালুকা এরিয়ার মল্লিকবাড়ি, ভরাডোবা শাখায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গঠনের লক্ষ্যে এসব বীজ বিতরণ করা হয়।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার, পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর রিজিওনের রিজিওনাল ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন, ভালুকা এরিয়ার এরিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহের শাখা ব্যবস্থাপকগণ।

ব্র্যাকের কর্মকর্তারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবারগুলো নিজেদের খাবারের একটি বড় অংশ নিজস্ব উদ্যোগে উৎপাদন করতে পারবে, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি নারীরা কৃষিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে পরিবার ও সমাজে তাদের অবদানকে আরও দৃঢ় করতে পারবেন।

স্থানীয়ভাবে এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে এবং অংশগ্রহণকারীরা এই সহায়তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কাবিখা প্রকল্পে কর্তাদের যোগসাজশে নয়-ছয়, বঞ্চিত দরিদ্র শ্রমিক

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:১২ পূর্বাহ্ণ
কাবিখা প্রকল্পে কর্তাদের যোগসাজশে নয়-ছয়, বঞ্চিত দরিদ্র শ্রমিক

অতি দরিদ্র, ভূমিহীন ও বেকার মানুষদের খাদ্য নিশ্চিতকরণের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন, নিয়ম মেনে কাজ না করা, নিম্নমানের কাজ, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার বাধ্যবাধকতা থাকলে বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই, গম বিক্রি করে দেওয়ার মত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত কাবিখা প্রকল্প। এমনকি অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে  নামসর্বস্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে তছরুফ করা হয়েছে প্রকল্পের টাকা। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়।

এস্কেভেটর (স্থানীয়ভাবে ভেকু নামে পরিচিত) মেশিন দিয়ে সস্তায় মাটি কাটার বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়জোড়া গ্রামের একটি মসজিদের জন্য ১২.৪৩০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ হয়। মসজিদটির নাম দক্ষিণ বড়জোড়া বাইতুলনূর জামে মসজিদ। এই মসজিদের ঈদগাহ্ মাঠে মূলত মাটি ভরাটের জন্য এই গম বরাদ্দ হয়। কিন্তু ঈদগাহ্ মাঠে এক কোদাল মাটিও ফেলা হয়নি। এমনকি মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্টরাও জানেন না এ বিষয়ে কিছুই। এই প্রকল্পের সভাপতি ইউনিয়ন চেয়রাম্যানের ফরিদ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ব্যস্ত রয়েছেন। পরবর্তীতে তাঁর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কল রিসিভ করেননি।

মগটুলা ইউনিয়নের তরফ পাছাইল গ্রামে একটি রাস্তার ইটের সলিং বাবদ বরাদ্দ হয় ১০.৭৮৯ মেট্রিক টন গম। রাস্তাটি তরফ পাছাইল গ্রামের শাহজাহান মহল্লাদারের বাড়ি থেকে মালি বাড়ি পর্যন্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, কাজ প্রায় অর্ধেক বাকি। কিন্তু ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে গম তুলে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি, ইউপি সদস্য শরাফ উদ্দিন। শুধু তাই নয়, মাসখানেক আগে করা এই রাস্তা থেকে ইট খুলে ইতোমধ্যেই পাশের পুকুরে চলে যাওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, ‘কোনভাবেই এই রাস্তা আসন্ন বর্ষাকাল পাড় হবে না। বর্ষাকালের মধ্যেই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এত নিম্নমানের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইসলামপুর রাস্তা থেকে খৈরাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা পুননির্মাণ বাবদ বরাদ্দ হয় ৭.৮০৯ মেট্রিক টন গম। কাবিখা প্রকল্পে কাজ করানোর নিয়ম শ্রমিক দিয়ে। কাজ করা হয়েছে এক্সকেভেটর দিয়ে। পুরো রাস্তায় মাটিও ফেলা হয়নি। রাস্তা থেকেই মাটি কেটে মাটি সমান করা হয়েছে অনেক জায়গায়।

সরিষা ইউনিয়নের একটি রাস্তা  পুননির্মাণে বরাদ্দ হয় ৪.৫০০ মেট্রিক টন গম। ইতোমধ্যে পুরো গম তুলে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু মাঠের কাজ করেছেন অর্ধেকের একটু বেশি। ধান কাটা হয়নি তাই কাজ করতে পারেননি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান আব্দুর রাজ্জাক।

আঠারোবাড়ি ইউনিয়নে গ্রহণ করা হয় দুটো প্রকল্প। এর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় আর একটি সম্পূর্ণ ভুয়া। সরাতি ব্রীজ থেকে কাতিয়ার হাওর হাশেমের পুকুর পর্যন্ত একটি রাস্তা পুননির্মাণ করা হয়।এর জন্য বরাদ্দ হয় ১০.৫১ মেট্রিক টন গম। এই প্রকল্পেও কোনো শ্রমিক ব্যবহার করা হয়নি। বিধিবহির্ভূতভাবে এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে বঞ্চিত হয়েছে এলাকার লোকজন। সরেজমিনে এই রাস্তার কোনো প্রযোজনীয়তাও চোখে পড়েনি। সারাদিনে তেমন কোনো লোকজন হেঁটেও আসেন না এই রাস্তা দিয়ে, গাড়ি চলা তো বহু দূরের কথা! অথচ এলাকার লোকদের বঞ্চিত করে এক্সকেভটর দিয়ে কাজ করে এমন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ঠিকই শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় হরিলুট হয়েছে আঠারোবাড়ির অন্য আরেকটি প্রকল্পে। প্রকল্পটি হলো সরাতি এমদাদুলের পানির পাম্প হতে নতুন ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণ। আঠারোবাড়ির পূর্বের প্রকল্প এবং এই প্রকল্পটি মূলত একই রাস্তা। একই রাস্তা দেখিয়ে দুই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ৯ মেট্রিকটন গম পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় কোনো সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়নি। কাজের বিনিময়ে গম দেওয়ার নিয়ম থাকলেও নিয়ম না মেনে সেই গম ট্রাক ভরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়ম হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের চোখের সামনে। কিন্তু, কাউকেই কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন,‘গম বিক্রি অবৈধ হলেও সবাই গম বিক্রি করে টাকা দেয়’।

কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘যদি কোন কাজ না করা হয় তাহলে আমি কাজ করার নির্দেশনা দিবো। ইতোমধ্যে আমি আজকে আঠারোবাড়ির কাবিখা প্রকল্প পরিদর্শন করতে এসেছি’।