খুঁজুন
বুধবার, ২৮শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ঢাকা

শেখ হাসিনার করা আইনেই তার বিচার চায় বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত : শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ
শেখ হাসিনার করা আইনেই তার বিচার চায় বিএনপি

শেখ হাসিনার আইনেই তার বিচার দেখতে চায় বিএনপি। এ জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শেখ হাসিনাকে যুক্ত করার বিধান বহাল রাখতে সংবিধান সংস্কার কমিশনে সুপারিশ করেছে জাতীয়তাবাদী দলটি। পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্তরা ভোটার হতে পারবে না বলে যে বিধান শেখ হাসিনা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, সেটাও পরিবর্তন না করার কথা বলেছেন তারা।

কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবে বিএনপি বলেছে, জুলাই গণহত্যার বিচারের জন্য এ বিধান বহাল রাখতে হবে। অবশ্য সংবিধান সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ করেনি। তাদের অভিমত, কোনো বিষয়ে সুপারিশ না করার অর্থ হচ্ছে তারা বিদ্যমান বিধানকে যৌক্তিক মনে করেছে। শেখ হাসিনার প্রণীত বিধানগুলো বিএনপি সংবিধানে বহাল রাখার কথা বললেও ‘যে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচারের টার্গেট করে’ সংবিধানে ওই বিধানগুলো যুক্ত করা হয়, সেই জামায়াতে ইসলামী তার প্রস্তাবে এগুলো বাতিলের সুপারিশ করেছে। অবশ্য দলটির সুপারিশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্তদের মৌলিক অধিকার না রাখার কথা বলা হয়েছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই দিনই কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি কমিশন তাদের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংবিধান সংস্কার কমিশন পাঁচ খণ্ডে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিএনপি গত বছরের ২৫ নভেম্বর সংস্কার কমিশনের কাছে ১১ পৃষ্ঠার লিখিত প্রস্তাবনা দেয়।

সংবিধান সংস্কার কমিশন তার সুপারিশ প্রণয়নে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় না করলেও দলগুলোকে চিঠি দিয়ে লিখিত মতামত নিয়েছে। দলগুলো যেসব মতামত দিয়েছে তা সুপারিশের পঞ্চম খণ্ডে হুবহু তুলে ধরেছে। পাশাপাশি তৃতীয় খণ্ডে দলগুলোর সুপারিশের তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের সারাংশে কমিশন বলেছে, কমিশন মোট ২৭টি রাজনৈতিক দল ও তিনটি জোটের কাছে লিখিত মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫টি রাজনৈতিক দল এবং তিনটি জোট লিখিত মতামত দেয়। যেসব রাজনৈতিক দল ও জোট জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সক্রিয়ভাবে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থেকেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নকে সমর্থন করেছে, ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে সাহায্য করেছে, কমিশন সেসব দল ও জোটকে সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরিতে যুক্ত করেনি।

বিএনপি তার সুপারিশে ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল, তার কিছু কিছু বাতিলের সুপারিশ করেছে। অপরদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-সংক্রান্ত সংবিধানের ৪৭(৩), সংসদ সদস্যদের যোগ্যতাবিষয়ক ৬৬ এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি-সংক্রান্ত ১২২ অনুচ্ছেদসহ পঞ্চদশ সংশোধনীর বেশকিছু সংশোধন বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। দলটি জুলাই গণহত্যা ২০২৪-এর বিচারের স্বার্থে এ প্রস্তাব দিয়েছে বলে কমিশনকে জানিয়েছে।

শেখ মুজিবের শাসনামলে গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধে সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্যদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে ৪৭(৩) বিধান যুক্ত করা হয়। এই বিধানের অধীন বেসামরিক ব্যক্তি ও সংগঠনকে বিচারের আওতায় আনতে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়। এ ছাড়া ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোনো অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তি দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে নতুন বিধান যুক্ত করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দণ্ডিত ব্যক্তি ভোটার হতে পারবেন না বলেও আরেকটি বিধান তিনি যুক্ত করেন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবনায় বিএনপি এই তিনটি বিধানই বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রস্তাবে দলটি বলেছে- ‘জুলাই গণহত্যা ২০২৪-এর বিচারের স্বার্থে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনীত পরিবর্তন বহাল রাখতে হবে।’

এর বাইরে বিসমিল্লাহ; রাষ্ট্রধর্ম (২ক); উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি (২৩ক); মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ (৪৪), সংসদ সদস্যদের পারিশ্রমিক (৬৮); নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা (১২৩) ও বিচার বিভাগসংক্রান্ত বেশকিছু বিধান (৯৪-১১২) বিষয়ে ২০১১ সালের সংশোধনী বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।

অপরদিকে ‘জাতির পিতার’ প্রতিকৃতি (৪ক); নাগরিকত্ব (৬); সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ (৭ক); সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য (৭খ); মূলনীতি (৮); জাতীয়তাবাদ (৯); সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি (১০); ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা (১২); ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি (১৫০); তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিলসহ বেশকিছু বিধান বাতিলের সুপারিশ করেছে।

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী সুপারিশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারসম্পর্কিত বিদ্যমান সংবিধানের ৪৭(৩), ৪৭ক ধারা বাতিল করতে বলেছে। দলটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে- এই ধারা দুটি প্রক্রিয়াগত অপব্যবহারে পরিণত হয়েছে। ধারাগুলো প্রিসাম্পশন অব ইনোসেন্স ধারণার বিপরীত। এই ধারা দুটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারণ, এই বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) অপব্যবহৃত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে আইসিটি আইনটি সংশোধন করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি ভোটার হতে পারবেন না বলে আওয়ামী লীগ সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদে যে বিধানটি যুক্ত করেছে, জামায়াত সেটাও বাতিল করার সুপারিশ করেছে।

দলটি বলেছে- আজকের দিনে এ ধারাটির কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই, যেমন বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে অভিযোগে অভিযুক্ত থেকে বঞ্চিত করা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বিশেষ করে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার নীতির সঙ্গে। সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি ভিত্তি, যা নিশ্চিত করে যে, সব নাগরিকের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ রয়েছে। এমনকি যারা গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত যেমন রাষ্ট্রদ্রোহের মুখোমুখি, তাদেরও বাদ দেওয়া অন্যায় এবং অসমতা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণতন্ত্র ইনক্লুসিভিটির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে এবং সব নাগরিককে ভোট দেওয়ার অধিকার দেয়, সমাজ গঠনে সবাই যে অংশীদার তা নিশ্চিত করে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তিকে সহযোগীদের আদেশে দণ্ডিত করা হয়েছে, তারা আর জীবিত নেই।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা যেসব বিষয়ে সুপারিশ করিনি, ধরে নিতে পারেন আমরা ওইগুলোর সঙ্গে একমত।’

অপর সদস্য ড. শরিফ ভূঁইয়াও একই ধরনের মন্তব্য করেন।  দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘যেসব বিষয় আমরা মনে করেছি বাতিল, সংশোধন বা যুক্ত করার দরকার, আমরা সেসব বিষয়ে সুপারিশ করেছি। যেসব বিষয়ে আমাদের সুপারিশ আসেনি, ধরে নিতে হবে বিদ্যমান বিধানের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে।’

জামায়াত সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি থাকতে হবে বলে কমিশনের কাছে প্রস্তাব করেছে। বিএনপি দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বলে প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে সংবিধান কমিশন কোনো ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বলে সুপারিশ করেছে। বিএনপি (৭০ অনুচ্ছেদ) আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রশ্ন বাদে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল। কমিশন কেবল অর্থবিল ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পক্ষে সুপারিশ করেছে।

ভালুকায় শিশু যৌন পাচার প্রতিরোধে সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৬:০৭ অপরাহ্ণ
ভালুকায় শিশু যৌন পাচার প্রতিরোধে সেমিনার

শিশু যৌন পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে ভালুকায় এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৯ মে) দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘রূপান্তর’-এর সহযোগিতায় এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জাহিদা ফেরদৌসী।

এছাড়াও সেমিনারে অংশ নেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল, ভালুকা থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুল হোসাইন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি এবং রূপান্তর-এর কর্মকর্তারা।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, শিশুরা যেন পাচারের শিকার না হয়, সেজন্য পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুদের নিরাপত্তায় সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।

ভালুকায় ব্র্যাকের বীজ বিতরণ কর্মসূচি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ১:১৩ অপরাহ্ণ
ভালুকায় ব্র্যাকের বীজ বিতরণ কর্মসূচি

“থাকবেনা কোনো পতিত জমি”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির শস্য নিরাপত্তা বীমা প্রকল্পের আওতায় ৩০ জন সদস্যের মাঝে সবজি বীজ বিতরণ করা হয়েছে।সোমবার বিকালে গাজীপুর রিজিওনের ভালুকা এরিয়ার মল্লিকবাড়ি, ভরাডোবা শাখায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান গঠনের লক্ষ্যে এসব বীজ বিতরণ করা হয়।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার, পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর রিজিওনের রিজিওনাল ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন, ভালুকা এরিয়ার এরিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহের শাখা ব্যবস্থাপকগণ।

ব্র্যাকের কর্মকর্তারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবারগুলো নিজেদের খাবারের একটি বড় অংশ নিজস্ব উদ্যোগে উৎপাদন করতে পারবে, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি নারীরা কৃষিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে পরিবার ও সমাজে তাদের অবদানকে আরও দৃঢ় করতে পারবেন।

স্থানীয়ভাবে এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে এবং অংশগ্রহণকারীরা এই সহায়তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কাবিখা প্রকল্পে কর্তাদের যোগসাজশে নয়-ছয়, বঞ্চিত দরিদ্র শ্রমিক

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:১২ পূর্বাহ্ণ
কাবিখা প্রকল্পে কর্তাদের যোগসাজশে নয়-ছয়, বঞ্চিত দরিদ্র শ্রমিক

অতি দরিদ্র, ভূমিহীন ও বেকার মানুষদের খাদ্য নিশ্চিতকরণের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন, নিয়ম মেনে কাজ না করা, নিম্নমানের কাজ, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার বাধ্যবাধকতা থাকলে বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই, গম বিক্রি করে দেওয়ার মত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত কাবিখা প্রকল্প। এমনকি অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে  নামসর্বস্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে তছরুফ করা হয়েছে প্রকল্পের টাকা। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়।

এস্কেভেটর (স্থানীয়ভাবে ভেকু নামে পরিচিত) মেশিন দিয়ে সস্তায় মাটি কাটার বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়জোড়া গ্রামের একটি মসজিদের জন্য ১২.৪৩০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ হয়। মসজিদটির নাম দক্ষিণ বড়জোড়া বাইতুলনূর জামে মসজিদ। এই মসজিদের ঈদগাহ্ মাঠে মূলত মাটি ভরাটের জন্য এই গম বরাদ্দ হয়। কিন্তু ঈদগাহ্ মাঠে এক কোদাল মাটিও ফেলা হয়নি। এমনকি মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্টরাও জানেন না এ বিষয়ে কিছুই। এই প্রকল্পের সভাপতি ইউনিয়ন চেয়রাম্যানের ফরিদ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ব্যস্ত রয়েছেন। পরবর্তীতে তাঁর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কল রিসিভ করেননি।

মগটুলা ইউনিয়নের তরফ পাছাইল গ্রামে একটি রাস্তার ইটের সলিং বাবদ বরাদ্দ হয় ১০.৭৮৯ মেট্রিক টন গম। রাস্তাটি তরফ পাছাইল গ্রামের শাহজাহান মহল্লাদারের বাড়ি থেকে মালি বাড়ি পর্যন্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, কাজ প্রায় অর্ধেক বাকি। কিন্তু ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে গম তুলে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি, ইউপি সদস্য শরাফ উদ্দিন। শুধু তাই নয়, মাসখানেক আগে করা এই রাস্তা থেকে ইট খুলে ইতোমধ্যেই পাশের পুকুরে চলে যাওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, ‘কোনভাবেই এই রাস্তা আসন্ন বর্ষাকাল পাড় হবে না। বর্ষাকালের মধ্যেই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এত নিম্নমানের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইসলামপুর রাস্তা থেকে খৈরাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা পুননির্মাণ বাবদ বরাদ্দ হয় ৭.৮০৯ মেট্রিক টন গম। কাবিখা প্রকল্পে কাজ করানোর নিয়ম শ্রমিক দিয়ে। কাজ করা হয়েছে এক্সকেভেটর দিয়ে। পুরো রাস্তায় মাটিও ফেলা হয়নি। রাস্তা থেকেই মাটি কেটে মাটি সমান করা হয়েছে অনেক জায়গায়।

সরিষা ইউনিয়নের একটি রাস্তা  পুননির্মাণে বরাদ্দ হয় ৪.৫০০ মেট্রিক টন গম। ইতোমধ্যে পুরো গম তুলে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু মাঠের কাজ করেছেন অর্ধেকের একটু বেশি। ধান কাটা হয়নি তাই কাজ করতে পারেননি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান আব্দুর রাজ্জাক।

আঠারোবাড়ি ইউনিয়নে গ্রহণ করা হয় দুটো প্রকল্প। এর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় আর একটি সম্পূর্ণ ভুয়া। সরাতি ব্রীজ থেকে কাতিয়ার হাওর হাশেমের পুকুর পর্যন্ত একটি রাস্তা পুননির্মাণ করা হয়।এর জন্য বরাদ্দ হয় ১০.৫১ মেট্রিক টন গম। এই প্রকল্পেও কোনো শ্রমিক ব্যবহার করা হয়নি। বিধিবহির্ভূতভাবে এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে বঞ্চিত হয়েছে এলাকার লোকজন। সরেজমিনে এই রাস্তার কোনো প্রযোজনীয়তাও চোখে পড়েনি। সারাদিনে তেমন কোনো লোকজন হেঁটেও আসেন না এই রাস্তা দিয়ে, গাড়ি চলা তো বহু দূরের কথা! অথচ এলাকার লোকদের বঞ্চিত করে এক্সকেভটর দিয়ে কাজ করে এমন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ঠিকই শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় হরিলুট হয়েছে আঠারোবাড়ির অন্য আরেকটি প্রকল্পে। প্রকল্পটি হলো সরাতি এমদাদুলের পানির পাম্প হতে নতুন ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণ। আঠারোবাড়ির পূর্বের প্রকল্প এবং এই প্রকল্পটি মূলত একই রাস্তা। একই রাস্তা দেখিয়ে দুই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ৯ মেট্রিকটন গম পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় কোনো সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়নি। কাজের বিনিময়ে গম দেওয়ার নিয়ম থাকলেও নিয়ম না মেনে সেই গম ট্রাক ভরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়ম হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের চোখের সামনে। কিন্তু, কাউকেই কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন,‘গম বিক্রি অবৈধ হলেও সবাই গম বিক্রি করে টাকা দেয়’।

কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘যদি কোন কাজ না করা হয় তাহলে আমি কাজ করার নির্দেশনা দিবো। ইতোমধ্যে আমি আজকে আঠারোবাড়ির কাবিখা প্রকল্প পরিদর্শন করতে এসেছি’।