৫০০ টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে খুন, গাজীপুর থেকে ঘাতক স্বামী গ্রেফতার

ময়মনসিংহের ভালুকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ভিআইপি পরিবহনের এক হেল্পার নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন যাত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় দুটি বাস পাল্লা দিয়ে চলছিল।
রবিবার (১৫ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার ভান্ডাব এলাকার এসএনএস সিএনজি পাম্পসংলগ্ন ঢাকাগামী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দ্রুতগতির ভিআইপি পরিবহনের একটি বাস মহাসড়কে আরেকটি অজ্ঞাত বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের মাঝখানে থাকা বিভাজকের ওপর উঠে পড়ে এবং সেখান থেকে সড়কে উলটে যায়। এতে বাসটির হেল্পার ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নিহতের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে তিনি ভিআইপি পরিবহনের হেল্পার হিসেবে বাসটিতে কর্মরত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আতিকুর রহমান জানান, “সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ভরাডোবা হাইওয়ে থানায় পাঠানো হয়েছে। আহত ৫ জনকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।”
দুর্ঘটনার ফলে মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়, এতে করে দুরপাল্লার যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া এলাকায় বাবাকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ করতে গেলে, কিশোর ছেলের হাতে খেলনা পিস্তল ধরিয়ে দিয়ে মিথ্যা চাঁদাবাজ বানিয়ে দুই কিশোরকে সেনা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। এ অভিযোগ করে কিশোরের বাবা সাইফুল ইসলাম। ওই ঘটনায় কিশোরদের পক্ষ এলাকায় চরম ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শনিবার (১৪জুন) বিকালে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের দিন জামিরদিয়া বাদশা টেক্সটাইল মিলের ২ নাম্বার গেইটে রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম স্থানীয় আল আমিনের স্ত্রীকে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে না দেওয়ায় আল আমিন, তার ভাই শামীম ও মেহেদী হাসান রিকশাচালক সাইফুলকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেন। পরে সাইফুলের ছেলে সিফাত তাঁর বাবাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় শুক্রবার (১৩জুন) তার দুই সহপাঠীকে নিয়ে মেহেদীদের ভ্যারাইটিজ দোকানে যায়। সেখানে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সিফাত দোকানের শোকেজের কাচে লাথি মারে। এ সময় মেহদীরা তিন ভাই ও তাদের কর্মচারীদের নিয়ে তাদেরকে ঝাপটে ধরে ওই দোকান থেকে খেলা পিস্তল কিশোরদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে। পরে আশেপাশের লোকজন এসে কিছু বুঝে উঠার আগেই কিশোরদেরকে ডাকাত বানিয়ে সেনা বাহিনীর ক্যাম্পে ফোন করে। সেনা ক্যাম্প কাছাকাছি থাকায় সেনাবাহিনী দ্রুত সময়ের মাঝে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুই কিশোরকে ভালুকা মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে মেহেদী হাসান বাদী হয়ে সিফাত ও সাদিকুলের বিরুদ্ধে পিস্তল দেখিয়ে চাঁদা দাবি ও দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সিফাতের বাবা সাইফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি রিকশাচালক, আল আমিনের স্ত্রীকে রিকশায় করে তার গন্তব্য পর্যন্ত না নেওয়ার কারণে আমাকে মারধর করে। ছেলে প্রতিবাদ করতেই তাকে খেলনা পিস্তল দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে”।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন জানান, সিফাত ও সাদিকুল ভদ্র ও শান্ত ছেলে হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তারা কখনোই এমন ঘটনায় জড়াতে পারে না। তাদের দাবি, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। তারা আরও বলেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করে কিশোরদের হয়রানি বন্ধ করা হোক।
মেহদী হাসান জানান, তারা আমার দোকানে এসে দোকানের শোকেজের উপর পিস্তল রেখে কাচে লাথি মারে। আমরা চিৎকার শুরু করলে লোকজন এসে তাদেরকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।
এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলায় হয়েছে। দুই কিশোরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদেরকে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠায়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় সরকারী রাস্তার পাশ থেকে রাতের আঁধারে প্রায় ২০ বছর বয়সী আকাশমণি ও মেহগনি প্রজাতির প্রায় ৫০টি বড় গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কাঠালী-মল্লিকবাড়ি এলজিইডি সড়কের মল্লিকবাড়ি ৯ নম্বর বাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই দশক আগে সরকারী ওই সড়কের দুই পাশে সাত শতাধিক আকাশমণি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছিল। রোপণের পর থেকেই এসব গাছের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয় স্বপন মিয়ার স্ত্রী মোর্শিদা বেগমকে। সম্প্রতি ওই স্থানে একটি কারখানার নির্মাণকাজ চলায় পাশেই ইটের উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সেই নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরাই গাছগুলো কেটে নিচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েকদিনে অন্তত ৫০টি গাছ কেটে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং আরও ১২টি গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর ভালুকা মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে গাছগুলোর মালিকানা কেউ দাবি না করায় তাৎক্ষণিকভাবে জব্দ করা সম্ভব হয়নি। পরে কিছু কাঠ স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামালের জিম্মায় রাখা হয়।
গাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মোর্শিদা বেগম বলেন, “গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০১১ সালে তাকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দেন। তার আরো ৭/৮ বছর আগে গাছগুলো রোপন করা হয়েছিলো। রাতের আঁধারে কোম্পানীর লোকজন গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বাঁধা দিতে গেলে তাকে ভয়ভিতি ও হুমকী দেয়া হয়। তিনি এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান।”
গাছের ক্রেতা সিরাজ উদ্দিন বেপারী জানান, “২৫/২৬ টি গাছ তিনি এক লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন এবং সাদিকুল নামে এক ব্যক্তিকে টাকাগুলো অগ্রিম দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি গাছ কেটে আনলেও বাঁধার কারণে অবশিষ্ট গাছগুলো আনতে পারেননি।”
ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল জানান, “সরকারী রাস্তার পাশ থেকে বেশ কিছু গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট কিছু গাছ তার জিম্মায় রাখা হলেও বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তিনি নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছেন।”
ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, “গাছ কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেউ মালিকানা দাবি না করায় জব্দ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ ব্যাপারে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক মহিলা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে আাইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, “খবর পেয়ে রাস্তার পাশ থেকে গাছ কেটে নেয়ার বিষয়ে তিনি খবর নিয়েছেন। আপাতত কিছু গাছের টুকরা স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়েছে। অফিস খোলা হলে ওই বিষয়ে অধিকতর খোঁজ নিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
আপনার মতামত লিখুন