

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ইমিউন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মনজিলা খাতুন (৩৩) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন স্বজনরা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে প্রসব ব্যথা নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের নশতি গ্রামের শহীদুল ইসলামের স্ত্রী মনজিলা খাতুনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাড়িতেই তিনি স্বাভাবিকভাবে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরে ইমিউন হাসপাতালে আনার পর নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আরও একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
স্বজনদের অভিযোগ, নবজাতকের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাতে প্রায় আড়াইটার দিকে তড়িঘড়ি করে মনজিলাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু রেফারের আগ পর্যন্ত চিকিৎসকরা মনজিলার খোঁজ রাখেননি।
মনজিলার ভাই হাফেজ আব্দুস শহীদ জানান, “আমি নিজের বোনের জন্য রক্ত দিতে প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তারা সকালে রক্ত নেবে। ভোর হওয়ার আগেই আমার বোন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। আমি বোনের মৃত্যুর বিচার চাই।”
অভিযোগ রয়েছে, ইমিউন হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন, প্রশাসনিক পরিচালক তার ছেলে ফয়সাল আরেফিন এবং পুত্রবধূ গাইনী চিকিৎসক নাঈম সুলতানা সানী – এই তিনজনই হাসপাতালের বেশিরভাগ অপারেশন পরিচালনা করে থাকেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এটি প্রথম নয় – হাসপাতালটিতে এর আগেও চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে পরিচালক ফরহাদ হোসেনের প্রভাবের কারণে এসব ঘটনা চাপা পড়ে যায়।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবার ৯৯৯-এ ফোন করলে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুর রহমান বলেন, “৯৯৯ থেকে কল পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে, হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন দাবি করেন, “চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ সত্য নয়। আমার ছেলে সারারাত ডিউটিতে ছিল।”
ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, “ইমিউন হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর জিথর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের মাঠ গরু রাখার স্থানে পরিণত হয়েছে, শহীদ মিনার পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়, আর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। মানসম্মত পাঠদানের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী আশ্রয় নিচ্ছে স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোতে।
সরেজমিনে উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের ২৮নং শ্রীপুর জিথর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে কর্মরত ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। তবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। ৩য় শ্রেণিতে ২৬ জনের মধ্যে ১১ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ২২ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ২১ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিল মাত্র ৭ জন। বিদ্যালয়ের মাঠে গরু বাঁধা ছিল এবং পুরাতন ঘরে রাখা ছিল গরুর খড়। শহীদ মিনারটি আগাছায় ভরা, মল-মূত্রে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঢাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষকরা ঠিকমতো সময়মতো বিদ্যালয়ে আসেন না এবং দুপুরের আগেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে চলে যান। শিক্ষকদের অনিয়মিততা ও পাঠদানে গাফিলতির কারণে দিনদিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে পাঠদান করেন। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কম। উপবৃত্তির আওতায় ১০৭ জন শিক্ষার্থী থাকলেও অনেকেই বিদ্যালয়ে আসে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ক্লাস করছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ বলেন, “আমি এখনো ওই বিদ্যালয়ে যাইনি। তবে দ্রুতই পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহলের দাবি, বিদ্যালয়ে নিয়মিত তদারকি ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না করা হলে ভবিষ্যতে এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষাও হুমকির মুখে পড়বে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় সংঘটিত আলোচিত তিন খুন মামলার প্রধান আসামি নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, ঘটনার পর থেকেই নজরুল পলাতক ছিলেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য ভালুকা মডেল থানার চারটি টিম একযোগে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিকেলে জয়দেবপুর থেকে নজরুলকে গ্রেফতার করে একটি টিম।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে ভালুকা পৌর শহরের টিএন্ডটি রোড এলাকার একটি বাসায় নজরুল ইসলাম তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) এবং ছেলে নিরব (২)–কে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার দিন সকালে নাইট শিফট শেষে বাসায় ফিরে এসে স্বামী রফিকুল ইসলাম ঘরের ভেতরে ঢুকে স্ত্রীর ও দুই সন্তানের রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধারালো একটি দা উদ্ধার করে, যা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন